দানা বাঁধছে ডলারবিরোধী মহাযুদ্ধ

পশ্চিমে অনেকে রুশ চিন্তাবিদ আলেক্সান্ডার দাগিনকে ইউক্রেন যুদ্ধে পুতিনের দার্শনিক উসকানিদাতা বলেন। এ নিয়ে ব্যাপক প্রচার আছে। ভিন্নমতও আছে। কিন্তু এ বিষয়ে তর্ক কম যে পুতিনের সাবেক উপদেষ্টা সার্গেই গ্লাজিয়েভ এ যুদ্ধকে মার্কিন ডলারবিরোধী বৈশ্বিক মহাযুদ্ধে বদলে নিতে আগ্রহী। ইউক্রেন যুদ্ধের পূর্বাপর বুঝতে দাগিনের মতো গ্লাজিয়েভের তৎপরতা ও ভাবনাচিন্তায় নজর রাখা এ সময়ে বেশ জরুরি। ক্রেমলিনে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো পদে না থেকেও পুতিন ও রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ এক অর্থনৈতিক গুরু তিনি। ইউক্রেন যুদ্ধ যে দ্রুত ডলার আধিপত্যের বিরুদ্ধে চীন-রাশিয়ার পাল্টা যুদ্ধে রূপ নিচ্ছে, তার পেছনে প্রধান এক পরামর্শদাতার কাজ করছেন সার্গেই গ্লাজিয়েভ।

কিন্তু ঠিক কীভাবে ডলারকে কোণঠাসা করতে চাইছেন পুতিন ও গ্লাজিয়েভ কিংবা চীনের সি চিন পিং? আদৌ কি তাতে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ ঘটছে? গ্লাজিয়েভের মতো রুশরা কি ডি-ডলারাইজেশনের (আন্তর্জাতিক লেনদেনে ডলারের প্রভাব কমিয়ে আনা) মাধ্যমে প্রকৃতই ভূরাজনীতির পুরোনো ছক বদলে দিতে পারবেন?

ডলার নিয়ে ভয়

সাত দশকের বেশি সময় গেল আন্তর্জাতিক রিজার্ভ কারেন্সি হিসেবে ডলার একচেটিয়া রাজত্ব করছে। জ্বালানি তেলের লেনদেনে ডলার ব্যবহারের মাধ্যমে সেই একচেটিয়াত্ব সর্বোচ্চ উচ্চতায় ওঠে। বহুকাল ডলার আর নিশ্চয়তা সমার্থক ছিল। এসবই বিভিন্ন দেশকে ডলারে রিজার্ভ রাখতে উৎসাহ জুগিয়েছে। ডলারের এই অর্থনৈতিক আভিজাত্যের রাজনৈতিক ফল ভোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির শাসকেরা বহুবার এ সুবিধাকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে ভিন্নমতালম্বী রাষ্ট্র ও সরকারের বিরুদ্ধে। এসব আক্রমণে বিভিন্ন সময় তারা সহযোগী করে নিয়েছিল ‘পাউন্ড’ ও ‘ইউরো’কে।

কিন্তু রাজনৈতিক কারণে ডলারকে ক্রমাগত মারণাস্ত্র হিসেবে ব্যবহারে অনেক দেশ এখন ত্যক্তবিরক্ত। যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে আফগানিস্তান থেকে রাশিয়া পর্যন্ত সবার ডলার-রিজার্ভ ইচ্ছেমতো আটকে দিচ্ছে, তাতে মধ্যপন্থী দেশগুলোর ভেতরও ভয় ঢুকেছে। গ্লাজিয়েভের ভাষায়, ডলার এখন এক বিষাক্ত মুদ্রার নাম। এ রকম ভীতিকে কাজে লাগিয়েই ডলার আধিপত্যের বিরুদ্ধে পাল্টা প্রতিরোধ গড়তে চায় রাশিয়া।

ডলারহীন মুক্তাঞ্চলের স্বপ্ন

এটা এখন পুরোনো খবর যে ইউক্রেনে হামলার পর রাশিয়ার প্রায় ৬০০ বিলিয়ন ডলার আটকে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যা ছিল বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম রিজার্ভ। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং লেনদেনের যোগাযোগব্যবস্থা ‘সুইফট’ থেকে তাদের অনেক ব্যাংককে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। রাশিয়া এ মুহূর্তে ডলারভিত্তিক আন্তর্জাতিক লেনদেনব্যবস্থা থেকে অনেকখানি বাইরে। এর আগে গত কয়েক বছর যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে ব্যাপকভিত্তিক এক বাণিজ্যযুদ্ধ চালিয়েছে।

সার্গেই গ্লাজিয়েভ মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ রকম অর্থনৈতিক মারণাস্ত্রের বিরুদ্ধে এখনই দাঁড়ানো দরকার রাশিয়া, চীনসহ অন্যদের। এটাকে ‘শেষ বিশ্বযুদ্ধ’ হিসেবে উল্লেখ করে বইও লিখেছেন তিনি ২০১৬ সালে।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পাল্টা হিসেবে রুশ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও অর্থনীতিবিদদের একটা বড় প্রকল্প হলো ইউরেশিয়া ইউনিয়ন। বর্তমানে এর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছেন সার্গেই গ্লাজিয়েভ। ইউরেশিয়া ও চীনকে কাছাকাছি এনে এই পণ্ডিত দল বিশ্ব অর্থনীতিতে ডলারবিরোধী নতুন মুক্তাঞ্চল গড়তে চায়। পুতিনের এই পরামর্শকদের পরিকল্পনা হলো ডলার আধিপত্যের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ইউক্রেন যুদ্ধটা আরও বড় পরিসরে করা যায়। তাঁরা মনে করছেন, ঔপনিবেশিক মুরব্বি হিসেবে ব্রিটিশদের আধিপত্য খর্ব হওয়ার সময় গত শতাব্দির মাঝামাঝি বিশ্ব যেভাবে বড় ধরনের ঝাঁকুনি খেয়েছিল, সে রকম আরেক মুহূর্ত এসেছে এখন। ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য কমবে এবং তা কমানোর সুযোগ কাজে লাগানো উচিত। কেবল সার্গেই গ্লাজিয়েভ বা পুতিন নয়, চীন-ভারতও নতুন সেই চিন্তায় শামিল হতে আগ্রহী।

কিন্তু নতুন এ যুদ্ধের দামামায় এ–ও সবার মনে আছে, ইরাকের সাদ্দাম হোসেন এবং লিবিয়ার গাদ্দাফি ডলারের আধিপত্য ভাঙতে গিয়ে শহীদ হন বলে কথিত আছে। সেই বিবেচনায় সার্গেই গ্লাজিয়েভ পুতিনের মতোই যুক্তরাষ্ট্রের বড় এক প্রতিপক্ষ এখন। অথচ এই পুতিনই ক্ষমতার প্রাথমিক দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর বেশ পছন্দের শাসক ছিলেন।

রুবলকে রক্ষা করতে পেরে আত্মবিশ্বাসী পুতিন

ডলার আধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রস্তুতি হিসেবে পুতিন গত আট বছরে স্বর্ণের মজুত তিন গুণ বাড়িয়ে নিয়েছেন। ইউক্রেন যুদ্ধের আগে পর্যন্ত রাশিয়ার রিজার্ভের এক–পঞ্চমাংশ ছিল স্বর্ণে (প্রায় ২ হাজার ৩০০ টন)। ডলার সংগ্রহে এসব এখন ব্যবহার করতে সক্ষম রাশিয়া। নতুন করে সোনার সঙ্গে রুবলের যে মূল্যমান বেঁধে দিয়েছে তারা (১ গ্রাম সোনা সমান ৫ হাজার রুবল)—তাতেও স্বর্ণের মজুত আরও বাড়বে। বাড়বে রুবলের শক্তিও।

এসব সুরক্ষার বাইরে রাশিয়া ইতিমধ্যে অনেক দেশের সঙ্গে কেবল রুবলে তেল বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে। জ্বালানি বেচাকেনায় ‘বন্ধুদেশ’ এবং ‘অ–বন্ধুসুলভ দেশ’ নামে দুটি তালিকা করেছে তারা। ‘বন্ধু’রা নিজেদের জাতীয় মুদ্রা বা ডিজিটাল কারেন্সি বিটকয়েনে এবং অ-বন্ধু দেশগুলো কেবল স্বর্ণ বা রুবলে রাশিয়ার জ্বালানি পাবে। রাশিয়া এ–ও বলছে, কেবল জ্বালানি নয়—ধীরে ধীরে অন্যান্য পণ্যেও তারা একই বিনিময়–ব্যবস্থায় যাবে। এ ঘোষণার ফল হয়েছে নাটকীয়। ইউক্রেন যুদ্ধের দেড় মাসের মাথায় রুবলের দাম আবার অনেক বেড়ে গেছে। এর অন্য মানে দাঁড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞায় রাশিয়ার অর্থনীতি তছনছ হচ্ছে না আপাতত। পণ্যবাজারে নাগরিকদের অসন্তোষও নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে তারা। ভারতের কাছে রুপিতে, চীনের কাছে ইউয়ানে এবং তুরস্কের কাছে লিরায় জ্বালানি বেচার মাধ্যমে ওই সব দেশের যে মুদ্রা রাশিয়া পাচ্ছে, সেটা দিয়ে তাদের থেকেই পণ্য ও সেবা কিনে অভ্যন্তরীণ পণ্য সরবরাহের সংকটও কাটছে তাদের।

কিন্তু সাময়িক এসব সমাধান কারেন্সি সোয়াপের (মুদ্রা অদলবদল) মতো। যে কারেন্সি সোয়াপে বিভিন্ন দেশের জাতীয় মুদ্রার বিনিময়মূল্য পরোক্ষে ডলারের সঙ্গে তুলনা করেই নির্ধারণ করতে হচ্ছে।

‘সুইফট’-এর বিকল্পে যাচ্ছে রাশিয়া-চীন-ভারত

ডলারের আধিপত্য কমাতে হলে রাশিয়া ও চীনের সামনে অবশ্যই চ্যালেঞ্জ হলো পণ্য বিনিময়ে সব দেশের কাছে গ্রহণযোগ্য একক কোনো মুদ্রা বাছাই করা। এমনকি একাধিক মুদ্রার নতুন বিনিময় ব্যবস্থার কথাও ভাবছে এসব বিদ্রোহী শক্তি, যাতে আসন্ন আন্তর্জাতিক বিনিময় ব্যবস্থাটি একক কোনো দেশকে রাজনৈতিক আধিপত্যের সুযোগ করে না দেয়। পাশাপাশি ওই সব মুদ্রায় লেনদেনের জন্য নতুন আরেক বার্তা বিনিময় ব্যবস্থাও লাগবে, যা ‘সুইফট’-এর বিকল্প হবে। এ রকম সবকিছুর ভিত্তি হিসেবে একটা আন্তর্জাতিক চুক্তির খসড়া তৈরির ইঙ্গিত দিয়েছেন সার্গেই গ্লাজিয়েভ ২৭ মার্চ এক সাক্ষাৎকারে। তবে সেই চুক্তির আগেই রাশিয়া ও চীন নিজেদের মধ্যে ইতিমধ্যে ‘সুইফট’-এর বিকল্প বার্তাব্যবস্থা কায়েম করে নিয়েছে এবং সেই ব্যবস্থায় আশপাশের অনেক দেশকে শামিল করতে তৎপর আছে। ভারত ইতিমধ্যে এসপিএফএস নামে পরিচিত রাশিয়ার ফিন্যান্সিয়াল মেসেজিং সিস্টেমে যুক্ত হওয়ার পরিকল্পনা করছে। ২০১৭ সাল থেকে লেনদেন চলতে থাকা এই ‘এসপিএফএস’ দ্রুত শামিল হতে চলেছে চীনের সিআইপিএসের (ক্রস বর্ডার ইন্টারব্যাংক পেমেন্ট সিস্টেম) সঙ্গে। ডলারভিত্তিক আধিপত্যের জগৎ এড়াতে রাশিয়ার সঙ্গে চীন ও ভারতের লেনদেনব্যবস্থার সমন্বয়ের চেষ্টা এখন মোটেই আর আলোচনার টেবিলে আটকে নেই; বরং সেটা অনেক বাস্তব চেহারা নিচ্ছে।

ভারত ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে রুশদের সঙ্গে ২০১৮ সালে চুক্তি হওয়া পাঁচ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের এস-৪০০ বিমান প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম নিচ্ছে রুপি-রুবল বিনিময়ব্যবস্থায়। অস্ত্র ছাড়াও সারের মতো জরুরি আমদানি পণ্যের সরবরাহ বাধামুক্ত রাখতেও রাশিয়ার সঙ্গে সুইফটের বিকল্প ব্যবস্থায় ঢুকতে হচ্ছে ভারতকে। বিশ্বজুড়ে এ রকম প্রবণতাগুলোরই মিলিত ফল হিসেবে ‘আন্তর্জাতিক সেটেলমেন্টে (লেনদেন নিষ্পত্তিকরণ)’ ডলারের হিস্যা ইতিমধ্যে অনেক কমেছে বলেই তথ্য মিলছে।

এসবই নতুন এক বিকল্প অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রাথমিক লক্ষণ স্পষ্ট করছে। কারণ, তাতে ডলারের চাহিদা কমবে। বলা বাহুল্য, ডলারকে এড়িয়ে নতুন ধারার লেনদেনগুলোও আপাদমস্তক পুঁজিতান্ত্রিক বিনিময় এবং তা পুঁজিতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থারই অংশ। পার্থক্য কেবল সেখানে ওয়াশিংটনের জায়গায় আধিপত্য করবে বেইজিং, মস্কো ও নয়াদিল্লি। উদীয়মান এই কাঠামোকে বলা যায় ‘তৃতীয় ব্রেটন উড।’ যেখানে ‘সার্ভিলেন্স’ একটা বড় উপাদান হিসেবে কাজ করবে। আবার এর এমন একটা পার্শ্বফলও পাওয়া যেতে পারে, তৃতীয় বিশ্বের ধনীদের পাচার করা অর্থের পুরোনো গন্তব্যস্থল পাল্টে যাবে। এখনকার মতো সেগুলো আর কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ইত্যাদি অঞ্চলে ছুটবে না—অন্য কোনো জনপদ খুঁজে নেবে।

কিন্তু একই পুঁজিতান্ত্রিক বিশ্বে এত অধিক তারকার সমাবেশ ওয়াশিংটনের পছন্দ হওয়ার কারণ নেই। ফলে সার্গেই গ্লাজিয়েভদের চিন্তাধারাকে রাশিয়া ও চীন যত জোরের সঙ্গে মদদ দিচ্ছে, ততই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে পুতিন ক্ষমার অযোগ্য এক প্রতিপক্ষ হয়েছেন। ইউরোপ-আমেরিকার প্রচারমাধ্যমে স্পষ্টত এখন তার আঁচ পাওয়া যাচ্ছে।

ইউক্রেন যুদ্ধের নাটকীয় ফলাফল দেখা যাবে অর্থনীতির জগতে

ইউক্রেন যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি যুক্ত না হলেও প্রথম থেকে এ যুদ্ধে তাদের প্রথম লক্ষ্য রুবলকে ঘায়েল করা। এখন মনে হচ্ছে সেটা আপাতত ঘটছে না। বরং রুবলের চাহিদা রয়েছে আন্তর্জাতিক বাজারে। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং রাশিয়াবিরোধী অনেক দেশে রুশ পণ্য ও সেবার জায়গায় ওয়াশিংটন তার পণ্য ও সেবার প্রবেশ বাড়াতে পেরেছে এ মুহূর্তে। কিন্তু এর মাঝেও ওয়াশিংটনের জন্য হতাশার একটা দিক হলো চীন ও রাশিয়া নিজেদের মাঝে সুইফটের বাইরে অর্থনৈতিক বার্তা আদান-প্রদান করতে থাকায় তাদের বাণিজ্য-তথ্যে যুক্তরাষ্ট্র আর আগের মতো নজরদারি করতে পারছে না। ডলার আধিপত্য না থাকার আরেক পরোক্ষ মানে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কর্তৃত্বও কিছুটা খর্ব হওয়া। আইএমএফকে ব্যবহার করে দশকের পর দশক যুক্তরাষ্ট্র তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে যেভাবে তার পছন্দের অর্থনৈতিক মডেল গ্রহণে বাধ্য করেছে, সেটা আগামী দিনে আর সহজে না–ও হতে পারে।

এসবই হলো বিশ্বকূটনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের এখনকার আগ্রাসী অবস্থানের বড় এক পটভূমি। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনকে মাঝখানে রেখে বিশ্বকে দুভাগ করতে চাইছে ওয়াশিংটন। এই ভাগাভাগির কেন্দ্রে তাদের বড় লক্ষ্য অবশ্যই ডলারের একচেটিয়াত্ব ধরে রাখা। যেসব দেশ রাশিয়া, চীন, ইরান বা ভেনিজুয়েলার সঙ্গে নিজ মুদ্রায় লেনদেন করতে চাইছে বা চাইবে, তারা নিশ্চিতভাবেই ব্যাপক কূটনীতিক চাপের শিকার হবে এ সময়। সেই চাপ কখনো আসবে মানবাধিকার পরিস্থিতির আদলে, কখনো রাজনৈতিক গণতন্ত্রের আকুতির আড়ালে। যদিও এ দুটোও জরুরি।

আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে শুরু হওয়া নব পর্যায়ের এ টানাপোড়েন ইউক্রেন যুদ্ধকেও দীর্ঘায়িত করবে। এ যুদ্ধের ফলাফলে এখন আর কেবল ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব নয়—বৈশ্বিক পুরো অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার নেতৃত্ব কার হাতে থাকবে, তারও নিষ্পত্তি নির্ভর করছে। অনেকে মনে করছেন, এ যুদ্ধের ফয়সালা হবে সমরবিদদের হাতে নয়, অর্থনীতিবিদদের দ্বারা। কিয়েভকে ঘিরে চলতে থাকা ধ্বংসলীলা বন্ধ হলেও এ যুদ্ধের আড়ালে শুরু হওয়া বিকল্প মুদ্রাব্যবস্থা গড়ার মূল যুদ্ধ থামবে না। সার্গেই গ্লাজিয়েভ ও আলেক্সান্ডার দাগিনরা এ যুদ্ধকে ওদিকেই নিতে চেয়েছিলেন (এবং ওয়াশিংটনও তাতে শামিল হয়েছে সব শক্তিতে!)

প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২২, দৈনিক প্রথম আলো

 

শেয়ার করুন: