চরম মূল্যস্ফীতির মধ্যে বাজেট আসছে। ফলে এবারের বাজেটে সবচেয়ে নিচুতলার মানুষদের সংগঠনগুলো অনেক দাবিদাওয়ার কথা জানাচ্ছে। দলিতদের চাওয়া-পাওয়ার এই বিবরণ সেই সূত্রেই পাওয়া।
বাংলাদেশে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর এক খণ্ডাংশ ‘দলিত সমাজ’। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার আনুমানিক হিসাবে এরা সংখ্যায় অর্ধকোটির কাছাকাছি। কেবল ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে দলিতদের মধ্যে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে পরিচিতদের ২৭টি কলোনি আছে। এর বাইরে আছে রবিদাস, ঋষিসহ বহু সম্প্রদায়। প্রতিটি জেলায় এ রকম মানুষ আছে। পেশাগত বিবেচনায় এদের অবস্থান তিন ধরনের। বড় এক অংশ পরিচ্ছন্নতাকর্মী। আরেক দল চা–বাগানে কাজ করে। অপর এক গোষ্ঠী বেঁচে থাকার সংগ্রামে গ্রাম-শহর মিলে অপ্রাতিষ্ঠানিক নানান কাজ করে।
এই জনগোষ্ঠীকে ঘিরে ইতিমধ্যে সরকারের কিছু উদ্যোগ আছে। এর মধ্যে একটা হলো হরিজন, বেদে ও হিজড়াদের নিয়ে সামাজিক নিরাপত্তামূলক প্রকল্প। অন্যটা বিভিন্ন সিটি করপোরেশনে তাদের জন্য বাসগৃহ নির্মাণ কর্মসূচি। ২০১১-১২ সালে বাসগৃহ তৈরি খাতে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দের মধ্য দিয়ে শেষোক্ত কাজ শুরু হয়। পরে এটা আরও সম্প্রসারিত হয়েছে। বরাদ্দও বেড়েছে। তাতে দলিত, অদলিত সব পরিচ্ছন্নতাকর্মী যুক্ত হয়েছে।
অন্যদিকে ২০১২-১৩–তে ৬৬ লাখ টাকার মাধ্যমে সাত জেলায় দলিত, বেদে, হরিজন ও হিজড়াদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি শুরু হয়। বর্তমানে সেটা ৬৪ জেলাতেই চলছে। তবে ‘অনগ্রসর’ শিরোনামে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর জন্য চলে গেছে সেই বরাদ্দ। সর্বশেষ অর্থবছরে ৫৭ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল এ রকম ‘অনগ্রসর’দের জন্য। এখন অবস্থা দাঁড়িয়েছে, দলিতদের দাবিদাওয়ার ফলে যখনই কোনো প্রকল্প আসে, সেটা ধীরে ধীরে ‘অনগ্রসর’ সবার হয়ে যাচ্ছে। তাতে দলিতদের সংকটের সুরাহা আর হয় না। অথচ তাদের জন্য আলাদাভাবে আর্থিক, প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক মনোযোগ দরকার। ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বাজেট বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ‘অনগ্রসর’ শব্দের আড়ালে দলিতরা অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। ফলে তাদের জন্য পৃথক বরাদ্দের বিষয়ও গুরুত্ব পাচ্ছে কম।
সমস্যা যখন থাকার জায়গা
ঢাকা, চট্টগ্রাম ও বরিশালে দলিতদের একাংশ—পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের থাকার জন্য বেশ বড় এক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। কিন্তু এ রকম উদ্যোগ দরকার দলিত-শ্রমজীবী সবার জন্য, সব জেলায়। কারণ, তাদের বড় অংশেরই প্রধান সমস্যা বাসস্থান।
এত দিন মূল সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে অস্থায়ী জায়গায় থাকতে বাধ্য করা হয়েছে দলিতদের। ভদ্রলোকদের বসতি থেকে দূরে কোথাও বাগিচায়, কোথাও রেলওয়ে বা সিটি করপোরেশনের জমিতে, সরকারি অফিস-আদালতের লাগোয়া জায়গায়, কোথাও জঙ্গলের একাংশে তারা থাকে। ২০১৪ সালে ২১টি জেলায় এই লেখকের নিজস্ব অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ৬০ ভাগ দলিতের মত—তারা যেখানে বাস করে, সে জায়গার মালিক তারা নয়। এর মধ্যে ৫৫ ভাগ জানিয়েছে, তারা সব সময় উচ্ছেদ–আতঙ্কে থাকে। যেখানে উচ্ছেদ–আতঙ্ক নেই, সেখানেও পুরোনো খুপরির মতো ঘরে থাকতে হচ্ছে একই পরিবারের একাধিক প্রজন্মকে।
এ অবস্থা থেকে বাঁচাতে দলিতদের স্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করে সেগুলো স্থায়ীভাবে তাদের নামে বরাদ্দ দেওয়ার কর্মসূচি দরকার। বিভিন্ন সিটি করপোরেশন পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য যেসব ভবন তৈরি করছে, সেখানে আপাতত চাকরি নেই, এমন দলিতদেরও থাকার সুযোগ প্রয়োজন।
কমিউনিটি ক্লিনিক দরকার দলিত পাড়াগুলোতে
দেশের অন্যান্য দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যার পাশাপাশি দলিত শ্রমজীবীদের বাড়তি কিছু স্বাস্থ্য সমস্যায় পড়তে হয় প্রতিনিয়ত।
কম মজুরি ও মর্যাদাহীন জীবনের কারণে তারা এমন কিছু কাজ করে, যাতে পেশাগত ঝুঁকি বেশি। অনেক সময় মাস্ক, দস্তানা, গামবুট ইত্যাদি ছাড়া খালি হাতে ঝাড়ু দেওয়াসহ নানান উপায়ে বর্জ্য পরিষ্কার করতে হয় পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের। এতে তারা চর্মরোগ, শ্বাসনালির সমস্যা, পিঠের সমস্যা ইত্যাদিতে ভোগে। অথচ শ্রমিকদের সুরক্ষাসামগ্রী দেওয়ার নীতিমালা আছে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলোতে।
চা–শ্রমিকেরা অনেকে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে কাজ করেন। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা উপকরণ ছাড়া কীটনাশক দিতে হয় অনেককে। এতেও স্বাস্থ্য সমস্যায় পড়েন তাঁরা।
লেখকের অনুসন্ধানকালে দলিতদের ৫৪ শতাংশ বলেছে, তাদের কাছাকাছি এলাকায় কোনো সরকারি হাসপাতাল নেই। ২১ শতাংশ বলেছে, হাসপাতালে তারা সেবা পেতে গেলে বৈষম্যে পড়ে। এই বৈষম্যের বড় কারণ জাতপাত ও পেশাগত পরিচয়।
দলিতদের পেশাগত নিরাপত্তা বাড়াতে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদগুলোর মাধ্যমে তাদের কাছে পেশাগত সুরক্ষা উপকরণ পৌঁছানো দরকার। এ ছাড়া দলিতদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে বাছাই করা কিছু এলাকায় বিশেষায়িত হাসপাতাল দরকার। দলিত কলোনি, পাড়া বা গ্রামগুলোতে স্বাস্থ্যকর্মীসহ কমিউনিটি ক্লিনিক দেওয়া যায় বাজেট বরাদ্দের মাধ্যমে।
মেয়েদের উচ্চশিক্ষায় আনতে বৃত্তি দরকার
দলিতদের মধ্যে শিক্ষার হার বাড়ছে। এটা ঘটছে অভিভাবকদের সচেতনতা ও সরকারের প্রচারণার মাধ্যমে। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা যত বাড়ছে, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষায় তাদের প্রবেশ সে হারে বাড়ছে না। এ অবস্থা বদলাতে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে দলিত শিক্ষার্থীদের জন্য ১ শতাংশ কোটার যে চর্চা শুরু হয়েছে, সেটা যাতে সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্বপ্রণোদিতভাবে অনুসরণ করে, সে বিষয়ে জোরালো নির্দেশনা প্রয়োজন।
কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা নেই, এমন অজুহাতে দলিত অভিভাবকেরা কন্যাদের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাতে চাইছেন না। এই চক্র ভাঙতে হলে সাময়িক সময়ের জন্য সব দলিত মেয়েশিক্ষার্থীর বৃত্তি প্রয়োজন। চা–বাগানের প্রাথমিক স্কুলগুলোতে (প্রায় ১৭০টি) গুণগতভাবে পাঠদান হচ্ছে কি না বা হওয়ার মতো পর্যাপ্ত শিক্ষক ও অবকাঠামো আছে কি না, সে বিষয়েও শ্রম ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যৌথ নজরদারি এখন সময়ের দাবি।
গ্রীষ্মে পানির অভাব
শহর-গ্রাম সর্বত্র দলিত কলোনিগুলোতে বড় এক সমস্যা বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন সুবিধার অপর্যাপ্ততা। ২০১৫ সালের আরেকটি জরিপে খোদ রাজধানী ঢাকার দলিত কলোনিগুলোতে দেখা গিয়েছিল পানির একেকটি উৎস ব্যবহার করে ১২ থেকে সর্বোচ্চ ৬০০ জন। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ছিল তখন গণকটুলী কলোনিতে। সেখানে ১ হাজার ২০০ মানুষের জন্য পানির উৎস ছিল মাত্র ২টি। নতুন ভবন পাওয়ায় সেখানে এখন এই সমস্যার তীব্রতা কমেছে। যারা ভবনে বরাদ্দ পাচ্ছে, তাদের কক্ষের সঙ্গে পানির উৎস থাকছে। গণকটুলী, ধলপুর, গাবতলী ও ওয়ারীতে এ রকম নতুন ভবন হলেও ঢাকার অন্যান্য কলোনিতে এবং পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের অন্যান্য জেলার দলিত পাড়ায় আগের মতোই পানির সংকট আছে। অথচ দৈনিক জনপ্রতি ন্যূনতম ২০ লিটার পানির জাতীয় মানদণ্ড এবং প্রতিটি পরিবার বা সর্বোচ্চ দুটি পরিবারের জন্য একটা স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানার ব্যবস্থার লক্ষ্য রয়েছে সরকারের। দলিতদের জন্য এ রকম ব্যবস্থা করতে বিশেষ প্রকল্প নেওয়া দরকার।
পানির সংকট আছে সুদূর চা–বাগানের শ্রমিক কলোনিগুলোতেও। অনেক সময় কুয়া, ছড়া, খালের পানি ব্যবহার করে ওখানকার বাসিন্দারা। গ্রীষ্মে টিউবওয়েলে পানি ওঠে না। টিউবওয়েলের সংখ্যাও অপ্রতুল। কুয়াগুলোও তখন শুকিয়ে যায়। মধ্য আয়ের বাংলাদেশের উন্নয়ন সূচকগুলোর সঙ্গে দলিতদের পানির সংকটের চিত্র মানানসই নয়।
দলিতমুখী সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি
বাংলাদেশে দারিদ্র্য কমছে এবং মানুষের গড় আয়ু বাড়ছে এখন। কিন্তু যে গতিতে মূলধারার সমাজে এটা ঘটছে, সেভাবে ঘটছে না দলিত শ্রমজীবী পরিবারে। জাতীয় উন্নয়ন ধারার এই ভারসাম্যহীনতা কমাতে তাদের জন্য সুনির্দিষ্ট সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি দরকার। এ রকম কর্মসূচির কিছু ঐতিহ্য আগে দু–এক বছরের বাজেটে ছিল। সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে সব হতদরিদ্রকে কোনো না কোনো সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করতে চায়। দলিত জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন ধারাকে এ ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিয়ে বিবেচনা করা দরকার।
এর আগে দলিতদের জন্য শুরু হওয়া অনেক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ‘অনগ্রসর শ্রেণি’র জন্য রূপান্তর করে তার বড় অংশ অদলিতদের দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সেসব আবারও ‘দলিত’দের জন্য সুনির্দিষ্ট করা যায়।
চা–বাগানে ‘বিশেষ সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি’ হিসেবে চার ভাগের এক ভাগ শ্রমিককে পাঁচ হাজার টাকা করে যে এককালীন ভাতা দেওয়া হয়, তাতে অস্থায়ী শ্রমিকদেরও যুক্ত করা প্রয়োজন।
খাসজমি দলিতদেরও দেওয়া যায়
বাংলাদেশে দলিত সমাজের বড় অংশ উপমহাদেশের অন্যান্য এলাকা থেকে এ অঞ্চলে আসা মানুষ। দীর্ঘ সময় কয়েক প্রজন্ম ধরে থাকার পর এখানে নাগরিক হয়ে গেলেও আজও এদের বড় অংশের ভূসম্পদ নেই। এই জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্যের বড় এক কারণ চিরস্থায়ী এই ভূমিহীনতা।
মালিকানাধীন ঘর বা জমি না থাকলে এ দেশে প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ বা নাগরিক সুবিধা পেতে সমস্যা হয়। খাসজমি বিতরণের জন্য সরকারের যে কয়টি প্রধান নীতি আছে, তাতে ভূমিহীন দরিদ্রদের খাসজমি দিতে সমস্যা নেই। একখণ্ড জমি পেলে থাকার মতো ব্যবস্থা দলিতরা নিজেরা করে নিতে পারত।
কাজের ছাউনি হলে পেশা বাঁচে
থাকার জন্য খাসজমি বরাদ্দের পাশাপাশি কিছু কিছু দলিত পেশাজীবীর পেশাগত কাজের জন্য ছাউনি দরকার। দেশের শহরাঞ্চলে যেসব দলিত জুতার কাজ করেন—যুগের পর যুগ এই কাজে থাকলেও নিশ্চিন্ত বসে কাজের জায়গা নেই তাঁদের। রাস্তার ধারে সার্বক্ষণিক উচ্ছেদ–আতঙ্কে কাজ করতে হয়। কাজের জন্য বিভিন্ন শহরে এই পেশাজীবীদের সরকারি জায়গায় ছোট আয়তনে ছাউনি নির্মাণ করে দেওয়া হলে তাঁদের কর্মসংস্থানের সমস্যা মেটে। অনেক জেলায় স্থানীয় সরকারকে দিয়ে জেলেসহ আরও বহু পেশাজীবীর জন্য এ রকম ছাউনি প্রকল্প নেওয়া দরকার, যা এসব পেশাজীবীকে পুরোনো পেশায় টিকে থাকতে সাহায্য করবে।
বৈষম্য বিলোপ আইনের দাবি
বর্তমান সময়ে দলিতদের একটা বড় দাবি বৈষম্য বিলোপ আইন। এ দাবির বাস্তবায়ন অন্য সব সমস্যার সমাধানে অভিভাবকতুল্য ভূমিকা রাখবে। ২০১৪ সাল থেকে দেশে এ রকম একটা আইনের খসড়া সংশোধন ও পরিমার্জন চলছে। সর্বশেষ ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল এই খসড়া বিল আকারে জাতীয় সংসদে পেশও হয়েছে। সংসদীয় একটি কমিটি এই বিলের পর্যালোচনা করছে এখন। দলিত সমাজ চাইছে সম্ভাব্য এই আইনে জাতপাতজনিত বৈষম্যকে ‘অপরাধ’ হিসেবে সাব্যস্ত করে শাস্তিযোগ্য করা হোক।
কারিগরি কাজের সুযোগ বাড়াতে প্রশিক্ষণকেন্দ্র
আগে দলিতরা যেসব পেশায় যুক্ত হতো, সেসব জাতভিত্তিক কাজে অদলিতরা বড় সংখ্যায় হাজির হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। আবার সমাজে জাতিগত অস্পৃশ্যতার রেশ থাকায় চরম প্রতিকূলতা পেরিয়ে শিক্ষিত হয়েও অনেক দলিত অফিস-আদালতে সম্মানজনক চাকরি পান না।
এ বাস্তবতায় জাতীয় সংবিধানের ২৯ নম্বর অনুচ্ছেদের আলোকে দলিত তরুণ-তরুণীদের জন্য সব নিয়োগে ন্যূনতম কিছু কোটা প্রয়োজন। এর বাইরে বিভিন্ন ধরনের কারিগরি প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রম খাতে দলিতদের স্বকর্মসংস্থানের উপযোগী করে গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। দলিত পরিবারগুলোকে দারিদ্র্যমুক্ত রাখা এই পথেই সম্ভব। সরকারের যুব প্রশিক্ষণে দলিতদের হিস্যা বাড়ানো যায়। এসব বিষয়ে বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে দলিতকেন্দ্রিক প্রশিক্ষণকেন্দ্র দরকার। এ রকম প্রশিক্ষণকেন্দ্রের পাশাপাশি দলিতদের জন্য রাজধানীসহ বড় কিছু শহরে কর্মজীবী হোস্টেল প্রয়োজন। যেসব দলিত প্রান্তিক জেলা থেকে শহরে কাজের সূত্রে আসছেন বা কাজ পাচ্ছেন, তাঁদের এখানে থাকার জায়গার সংকটে পড়তে হচ্ছে। কেবল হোস্টেলের অভাবে বহু দলিত শহরে কাজ পেয়েও টিকতে পারছেন না। একই সমস্যা দলিত শিক্ষার্থীদের।
ভাষা-সংস্কৃতি বাঁচাতেও কিছু করা দরকার
সংখ্যালঘু কয়েকটি জাতিগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক চর্চার জন্য কয়েকটি ইনস্টিটিউট আছে দেশব্যাপী। নিশ্চিতভাবে এটা ভালো উদ্যোগ। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য গড়া ইনস্টিটিউটগুলো তাদের ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় বর্তমানে যে ভূমিকা রেখেছে, একই রকম প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো প্রয়োজন দলিতদের ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায়। শিল্পকলা একাডেমিকেও দলিত সংস্কৃতিমুখী প্রকল্প গ্রহণ করতে বাজেট নির্দেশনা দেওয়া দরকার। প্রাতিষ্ঠানিক ও একাডেমিক মদদ না থাকায় অনেক দলিত ভাষা ও সংস্কৃতি বর্তমানে টিকে থাকার সংকটে পড়েছে। এ রকম অবস্থা বদলে দেওয়া যায় দলিদের ভবিষ্যতের দিকে লক্ষ করে কিছু বাজেট-বিনিয়োগের মাধ্যমে, যা বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করবে।