বিসিএস পরীক্ষায় যদি প্রশ্ন আসে—শ্রীলঙ্কায় শাসনব্যবস্থা গণতান্ত্রিক না রাজতান্ত্রিক? নিশ্চিন্ত উত্তর দেওয়া কঠিন হবে। দেশটির শাসনকাঠামোর গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে ২০ জনের বেশি আছে একই পরিবারের। মন্ত্রিসভাতেই আছেন ‘রাজাপক্ষে’ পরিবারের পাঁচজন—প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, সেচমন্ত্রী ও যুবমন্ত্রী। প্রথম চারজন ভাই। তাঁদের মধ্যে সেজ ভাই, দেশটির প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের সাংবিধানিক ক্ষমতা রাজতন্ত্রের রাজার মতো। এ পরিবারের ৯ সদস্য আছেন ২২৫ আসনের পার্লামেন্টে।
রাজাপক্ষেদের উত্থান শ্রীলঙ্কার দক্ষিণে ধান আবাদের জনপদ হামবানটোটা থেকে। অনেক জমিজমা ও নারকেলবাগান ছিল এ বংশের। তবে প্রতিপত্তি হয়েছে রাজনীতির হাত ধরে। গত দুই জাতীয় নির্বাচনে দেশটির নাগরিকেরা রাজাপক্ষেদের হাতে উদার হৃদয়ে নিজেদের ভবিষ্যৎ সঁপে দিয়েছেন। তামিল ও মুসলমানদের ‘নিয়ন্ত্রণে’ রেখে বৌদ্ধ-সিংহলিদের রাজাপক্ষেরা উন্নতির চরম শিখরে নিয়ে যাবেন, এমনি আশা জাগানো হয়েছিল। কিন্তু এখন সংসার চালানোর ঝুঁকিতে পড়েছে পুরো দেশের মানুষ। জ্বালানি, ওষুধ, গুঁড়া দুধ, সার—সবকিছু দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠছে। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় কোনো পণ্য পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই। পাওয়া গেলেও দামের লাগাম নেই। জাতীয়তাবাদের সঙ্গে লোকরঞ্জনবাদ মিলে একটা দেশকে কী ভয়ানক সংকটে ফেলতে পারে, তার সমকালীন নজির লঙ্কা।
অথচ এ দেশকে ব্রিটিশরা বলত ‘জুয়েল অব দ্য ক্রাউন’। তাদের রাজত্বে এত সমৃদ্ধ ছিল দ্বীপটি! পুরোনো লঙ্কার সেই ‘শ্রী’ এখন উধাও। ইদানীং ওই দেশ থেকে সংবাদ আসে, ‘তেল কেনার লাইনে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে দুজনের মৃত্যু’, ‘কাগজের অভাবে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে পারল না’, ‘৭৫ বছরে এত দুর্দশা দেখেনি লঙ্কাবাসী’, ‘পেট্রলপাম্পে সৈন্য মোতায়েন’ ইত্যাদি।
কীভাবে লঙ্কা এ দশায় পড়ল? কেন দুই দশক আগেও সমৃদ্ধ থাকা দেশটি দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম? এর মধ্যে সবচেয়ে জরুরি প্রশ্ন বোধ হয় এই যে লঙ্কাবাসীর দুর্দশা থেকে সার্কভুক্ত অন্যান্য দেশের নাগরিকদের সতর্ক হওয়া বা শিক্ষা নেওয়ার কিছু আছে কি না।
ঘৃণা, বিদ্বেষ আর গোলাগুলির রাজনীতির পর
আর কয় দিন পরই শ্রীলঙ্কায় নতুন বছর আসছে। বাংলাদেশের সঙ্গে বড় মিলের দিক এটা। কিন্তু এবার উৎসবের মুখে মানুষ পড়েছে উদ্বেগে।
দৃশ্যমান প্রধান সমস্যা হলো প্রয়োজনীয় ডলার নেই সরকারের হাতে। এতে পুরো অর্থনীতি এক দুষ্টচক্রে খাবি খাচ্ছে। দিনের বিরাট সময় ঘোষণা দিয়েই বিদ্যুৎ বন্ধ রাখে সরকার। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জ্বালানি তেল কিনে আনতে পারছে না তারা। জ্বালানির টানাপোড়েনে বাড়ছে পরিবহন ব্যয়।
আশঙ্কা করা হচ্ছে, দেশটি হয়তো এ বছর বিদেশি দেনার কিস্তি শোধ দিতে পারবে না। বৈদেশিক মুদ্রার কোষাগারে দুই বছর আগেও ছিল সাত বিলিয়ন ডলারের বেশি। এখন সেটা দুই বিলিয়নের নিচে নেমে গেছে। ক্রেডিট রেটিং সংস্থাগুলো লঙ্কাকে নিয়ে বিশ্বকে ক্রমাগত সতর্ক করছে। ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই বলে এ দেশকে কর্জ দিতে ভয় পাচ্ছে সবাই।
হাতে থাকা ডলারগুলো ধরে রাখতে সরকার বহু পণ্যের আমদানি নিয়ন্ত্রণ করছে। এতে বাজারে সেসব পণ্যের দাম গেছে বেড়ে। ডলারের বিপরীতে স্থানীয় রুপির দর নিয়ন্ত্রণমুক্ত করে দেওয়ায় সেটা পড়তে পড়তে এক ডলার সমান আড়াই শ রুপিতে দাঁড়িয়েছে।
১৯৭৭ সালে শ্রীলঙ্কা যখন বাজার অর্থনীতিতে যাত্রা করে, তখন ১ ডলার সমান ছিল ৮ রুপি। ৪৫ বছরে গণতন্ত্রের আড়ালে গুটিকয় সিংহলি পরিবারের শাসনে দেশটির মুদ্রার মান সর্বশেষ অবস্থায় পৌঁছাল। পতনশীল রুপির আয়নায় দেখলে স্বাধীন শ্রীলঙ্কায় জনগণের অবস্থা অনেকখানি বোঝা যায়। শাসকেরা এখানে তামিল ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা, বিদ্বেষ ও গুলি ছুড়ে রাজনীতি করে গেছে ক্রমাগত। কিন্তু পর্যটন ও চা–শিল্পের বাইরে অর্থনীতিকে বহুমুখী করেনি।
দেশটির বর্তমান দুর্দশা অর্থনৈতিক চরিত্রের হলেও নাগরিকদের বিপন্নতার আসল পাটাতন তৈরি করেছে পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতি। অতীতে রাজত্ব করেছেন ‘সেনানায়েক’, ‘বন্দরনায়েক’রা। এখন রাজাপক্ষেদের যুগ। শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রীয় বাজেটের ৭৫ ভাগ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা রাজাপক্ষে গোত্রের ২০-২৫ সদস্যের হাত দিয়ে খরচ হয়েছে গত কয়েক বছর। সুতরাং বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের রাজনৈতিক দায় এ বংশের ওপর বর্তায় অনেকখানি।
লোকরঞ্জনবাদের ছায়ায় দুর্দশার বিস্তার
অনেক ভাষ্যকারের মতে, লঙ্কার এখনকার সংকটের কারণ করোনা মহামারি। করোনাকাল দেশটির রোজগারের বড় জায়গা পর্যটনকে বিপদে ফেলেছে। মানুষের বেড়াতে আসা বন্ধ ছিল বহুদিন। রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটেও পর্যটক আরেক দফা কমেছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর এসব তথ্যে কিছু সত্যতা আছে। তবে পুরো সত্য নেই।
মহামারি লঙ্কার আশপাশের সব দেশকে অর্থনৈতিক টানাপোড়েনে ফেললেও কেউ তাদের মতো বেসামাল হয়নি। লঙ্কায় অর্থনৈতিক নৈরাজ্যের উৎসে রয়েছে রাজনীতি। এখানে ক্ষমতাসীন পরিবারের কাছে দেশ পরিচালনা রাজতান্ত্রিক ব্যাপারের মতো। ফলে প্রশাসনিক জবাবদিহি ও আর্থিক শৃঙ্খলার ঘাটতি ছিল দেশে। তারই প্রভাব পড়েছে অর্থনীতিতে। শাসক পরিবারের মনের খেয়ালে নেওয়া অনেক সিদ্ধান্তের দায় শোধ করতে হচ্ছে সমগ্র দেশকে।
বর্তমান প্রেসিডেন্ট ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে হঠাৎ করের হার কমিয়ে দিয়েছিলেন এক দফা। তাৎক্ষণিক আরেক সিদ্ধান্ত ছিল কৃষিকে শত ভাগ রাসায়নিক সারমুক্ত করা। পূর্বপ্রস্তুতি এবং বিকল্প না ভেবে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ ছাড়া বিগত দশকগুলোতে ‘উন্নয়নের চমক’ দেখাতে বিদেশি ঋণে এমন সব অবকাঠামো বানানো হয়, যা থেকে আয় তেমন কিছু হয়নি। সেসব প্রকল্প-ঋণ সুদে-আসলে পরিশোধের সময় চলে এসেছে এখন।
লোকরঞ্জনবাদী রাজনীতি সচরাচর সংকটে পড়েও উচ্চকণ্ঠে সেটা আড়ালের চেষ্টা করে। ছদ্ম আত্মবিশ্বাস দেখানো হয় জনতাকে। রাজাপক্ষেরাও বাণিজ্য ভারসাম্য কমাতে কোনো অবস্থায় আইএমএফের কাছে যাবে না, পণ করেছিলেন। সম্প্রতি সেই শপথ থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা। এর মানে দাঁড়াচ্ছে, আইএমএফের কিছু ‘সংস্কার’ প্রস্তাবের ভেতর দিয়ে যেতে হবে দেশটিকে এখন। শাসকদের নেওয়া লোকরঞ্জনবাদী অনেক সিদ্ধান্ত পাল্টাবে তাতে। অর্থ-বাণিজ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনেক ক্ষমতা চলে যাবে হয়তো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে।
আইএমএফের এ রকম নানা প্রেসক্রিপশন থেকে বাঁচতে সরকার চালাকিপূর্ণ আরেক কৌশল নিয়েছিল। অর্থনৈতিক সমর্থনের জন্য ভারত ও চীন উভয়ের কাছে ধরনা দেয় তারা। সরকার জানে লঙ্কাকে কাছে টানতে বেইজিং ও নয়াদিল্লি উভয়ে আগ্রহী। সেই আগ্রহকে মুদ্রায় রূপান্তর করতে চেষ্টায় আছেন রাজাপক্ষেরা। তাঁদের এ চেষ্টা ব্যর্থ হয়নি। কলম্বোয় চীনের রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন, তাঁরা লঙ্কাকে আড়াই বিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়ার বিষয় বিবেচনা করছেন। যদিও দেশটির দরকার সাত বিলিয়ন ডলার।
দায় আছে ‘দাতা’দেরও
শ্রীলঙ্কার বর্তমান দুরবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার দাতারাও। যার মধ্যে সবার আগে নাম আসে চীনের। গত দুই দশক তারা কলম্বোয় প্রধান অর্থনৈতিক মিত্র। বিভিন্ন সময় প্রায় চার বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে তারা লঙ্কার অবকাঠামো ‘উন্নত’ করতে। সেসব ঋণ এখন দেশটির বিড়ম্বনার একাংশ। রাজাপক্ষেরা সেসব ঋণের খানিকটা মাফ চাইছেন। শাসক পরিবারটি সংকট সামাল দিতে ভারতের কাছেও হাত পেতেছে। নয়াদিল্লি তাদের বিমুখ করছে না। খাদ্য কেনার জন্য এক বিলিয়ন ডলার দেওয়ার ঘোষণা এসেছে তাদের থেকে।
রাজাপক্ষের ভূরাজনৈতিক সুবিধা হলো চীন-ভারত উভয়ে লঙ্কার পাশে দাঁড়াতে আগ্রহী। তবে সব ধরনের ঋণ ও সহায়তার বিনিময়ে উভয়ে কলম্বোর কাছ থেকে প্রকাশ্যে না হলেও গোপনে নানান সুবিধা এবং প্রশ্নহীন আনুগত্য আশা করবে। তবে শক্তিশালী এ দুই দেশের তাৎক্ষণিক আর্থিক সহায়তায় শ্রীলঙ্কার সুশাসনের সংকট কাটছে না, বরং তা শাসক পরিবারকে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে সাহায্য করছে। আর এভাবে লঙ্কার চলতি দুর্দশায় চীন-ভারতের শাসকদের দূরবর্তী ভূমিকা অগ্রাহ্য করার মতো নয়।
রাজাপক্ষেরা একসময় চীনের ঋণে হামবানটোটা বন্দর বানিয়ে জনগণকে মুগ্ধ করেছিলেন। পরে দেখা যায় সেই সমুদ্রবন্দর এবং পাশের মাত্তালায় বানানো ‘রাজাপক্ষে বিমানবন্দর’ থেকে প্রত্যাশামতো আয় আসছে না। প্রায় দুই শ মিলিয়ন ডলারে বানানো এখানকার বিমানবন্দরটিতে দিনে মাত্র দুটি বিমান ওঠানামা করতে দেখে ২০১৬ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিন তাকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে কম ব্যবহৃত বিমানবন্দর’ উপমা দেয়। এ–ও তৈরি হয় চীনের এক্সিম ব্যাংকের উচ্চ সুদের ঋণে।
এ রকম দেনা মেটাতে পরে হামবানটোটা সমুদ্রবন্দর চীনের কাছেই সোয়া বিলিয়ন ডলারে লিজ দিতে হয়েছে। ওই লিজে পাওয়া অর্থও ইতিমধ্যে অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার কালো গহ্বরে হারিয়ে গেছে। এর মধ্যে বিদেশ থেকে ডলার আয়ের বিকল্প কোনো উপায়ও দেশটির নীতিনির্ধারকেরা বের করতে পারেননি। চিনি থেকে ওষুধসহ বহু কিছুতে এখানে মানুষকে আমদানির দিকে চেয়ে থাকতে হয়। এ রকম আমদানিনির্ভরতার কারণেই ডলার সংকট মানুষকে এত বিপদে ফেলেছে।
চীন ছাড়াও শ্রীলঙ্কা বড় অঙ্কের ঋণগ্রস্ত হয়ে আছে এডিবি, বিশ্বব্যাংক ও জাপানের কাছেও। আন্তর্জাতিক অর্থবাজার থেকে বিভিন্ন সময় আরও নানান ধরনের ঋণ নিয়েছেন শাসকেরা। এসব ঋণ গলার ফাঁস হয়েছে এখন দেশের।
সব ধরনের ‘দাতা’দের দেনা শোধে রাজাপক্ষের জন্য একটা বিকল্প হতে পারত যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ। কিন্তু শ্রীলঙ্কার শাসকদের মদদ দিতে পশ্চিমের আগ্রহ কম। তারা চাইছে কলম্বোয় তামিল নীতির পরিবর্তন। জাফনাসহ উত্তরাঞ্চলে স্বায়ত্তশাসন দেওয়া এবং তামিলবিরোধী যুদ্ধে যেসব গণহত্যা হয়েছে, তার বিচার চাইছে পশ্চিম। রাজাপক্ষেদের ঘনিষ্ঠ অনেক সামরিক কর্মকর্তা তামিল নিধনের দায়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় পড়েছেন। মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নত করতে এসব হলো দেশটিকে চাপে রাখার কৌশল। কিন্তু ওয়াশিংটনের চাপে রাজাপক্ষেরা মাথা নোয়াবেন বলে মনে হয় না; বরং সিংহলি ভোটার ও সিংহলি-প্রধান সশস্ত্র বাহিনীকে খুশি রাখতে হিন্দু-তামিল এবং মুসলমান-তামিল উভয়কে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শ্রেণির নাগরিকের আদলেই রাখা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের সঙ্গে রাজাপক্ষেদের মানবাধিকার, আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন, নাগরিক স্বাধীনতার প্রশ্নে সমঝোতার সম্ভাবনা কম। তবে আইএমএফের সঙ্গে সম্ভাব্য সমঝোতা এগিয়ে নিতে ওয়াশিংটনের সঙ্গেও যেকোনো উপায়ে কিছু বোঝাপড়ায় আসতে হবে গোতাবায়া ও মাহিন্দা ভ্রাতৃদ্বয়কে। ঠিক এ রকম সময়েই রাজনীতিবিষয়ক মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড বাংলাদেশের পাশাপাশি কলম্বোয়ও এলেন।
সামাজিক অস্থিরতার ইঙ্গিত
রাজাপক্ষেরা শেষ পর্যন্ত আইএমএফের কাছে যদি আত্মসমর্পণ করেই ফেলেন তাতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে বাজেট বরাদ্দে ব্যাপক কাটছাঁট শুরু হবে। সামাজিক খাতগুলো থেকে রুপি কমবে। বিশেষ করে যেসব প্রকল্প রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া। আইএমএফ চাইবে জনগণকে চূড়ান্তভাবে বাজারের হাতে ছেড়ে দেওয়া হোক। এতে নাগরিকদের জীবন আরও দুর্বিষহ হবে। বিরোধী দলগুলো তখন হয়তো রাস্তায় নামার কিছু সুযোগ পাবে। সে রকম কিছু বিক্ষোভ ইতিমধ্যে হয়েছে। তবে এর ভেতর দিয়ে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক সংস্কারের সম্ভাবনা কম। কারণ, রাজনীতির র্যাডিক্যাল ধারা দেশটিতে দুর্বল। তা ছাড়া পরিবর্তনবাদী রাজনীতি ও প্রচারমাধ্যমের স্বাধীনতা দমিয়ে রাখতে কঠোর আইনকানুন যথেষ্ট আছে শাসকদের হাতে। সর্বশেষ খবর এসেছে, সরকার জ্বালানি বিক্রির জায়গাগুলোতে সৈন্য বসিয়েছে। এটা ‘শৃঙ্খলা রক্ষা’র জন্য করা হচ্ছে বলা হলেও জনগণকে ভয় দেখানোর জন্যও হতে পারে। লক্ষণ বলছে, সংকটগ্রস্ত মানুষ প্রতিবাদ করলে বেসামরিক শাসন ক্রমে সামরিক আদল নেবে। তবে জ্বালানি সংগ্রহের লাইনে ছুরি মারামারিতে ইতিমধ্যে একজন খুন হয়েছে, যা সামাজিক অস্থিরতার ইঙ্গিত দেয়।
শ্রীলঙ্কা ঔপনিবেশিক শাসনমুক্ত হয়েছে সাত দশক আগে। সিংহলি এলিটরা বরাবর চেয়েছেন ঔপনিবেশিক স্থিতাবস্থা টিকে থাকুক সমাজে। ভূরাজনৈতিক স্বার্থে কিছু ‘দাতা’ সিংহলি এলিটদের রাষ্ট্রক্ষমতায় মদদ দিতে দিতে ওই স্থিতিশীলতার ভেতর প্রায় রাজতন্ত্র কায়েম করে দিয়েছে। এই নব্য রাজপরিবার আয়-ব্যয়ের জরুরি হিসাব ছাড়াই বিশাল বিশাল বন্দর, রাস্তা, ভবন বানিয়ে জনগণকে মোহাচ্ছন্ন রাখার কৌশল নিয়েছিল। পূর্বাপর বিবেচনাহীন এ উন্নয়ন-নীতির শিকার শ্রীলঙ্কা। যে নীতি অনুসরণ করছে দক্ষিণ এশিয়ার আরও অনেক দেশ। আশপাশের সেসব দেশে লঙ্কার বর্তমান দুর্দশার সংবাদ খুব কম প্রচারিত হচ্ছে, যা বেশ কৌতূহলোদ্দীপক!