পাকিস্তানেও কি তালেবান ক্ষমতায় আসতে পারে?

পাকিস্তানের সরকার ও সামরিক প্রশাসনের বরাবরই দাবি, তেহরিক-ই-তালেবান বা টিটিপি দলটি ভারতের সমর্থনপুষ্ট। এ রকম অভিযোগ তুলে টিটিপিকে নিষিদ্ধও করা হয়। কিন্তু গেল সপ্তাহে পাকিস্তান সরকার এই দলের সশস্ত্র কর্মকাণ্ড থামাতে তাদের সঙ্গে সাময়িক সমঝোতায় এল। আপাতদৃষ্টে একে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির একটা ছোট ঘটনা হিসেবে নেওয়া যায়। কেউ কেউ একে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ‘শান্তিবাদী’ প্রচেষ্টা আকারেও দেখতে বলছেন। কিন্তু বাস্তবে দেশটির সমাজের মোটাদাগের মোড় পরিবর্তনও হতে পারে তা। সমঝোতার পক্ষে টিটিপির মন জোগাতে আফগান-তালেবানের সহায়তা নিতে হয় ইমরান সরকারকে। ভারত প্রভাবিত সংগঠনটি কেন আফগান তালেবানের কথা শুনছে, সে প্রশ্ন দেশটির কর্তারা যে এখন এড়িয়ে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক। একই সময় সরকার ‘টিএলপি’ নামে পরিচিত তেহরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তানের ওপর থেকেও নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। সেটিও ঘটেছে সমঝোতার পর। ধারাবাহিক এসব ‘সমঝোতা’ পাকিস্তানের রাজনীতিতে গভীর তাৎপর্য নিয়ে হাজির হয়েছে। শরিয়াহ বিধিবিধান কায়েমে ইচ্ছুক রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য এসবই উদ্দীপনার নতুন তরঙ্গ আকারে হাজির হয়েছে।

‘সমঝোতা’র বিষয়বস্তু থাকছে অপ্রকাশিত
পাকিস্তানে সবাই জানে এবং বলছে টিটিপির সঙ্গে সরকারের সমঝোতা হয়েছে, কিন্তু সমঝোতার বিষয়বস্তু জানানো হচ্ছে না। টিটিপি নিজেও কর্মীদের বলছে, তারা সরকারের সঙ্গে ‘যুদ্ধবিরতি’তে গেল। দলের কমান্ডার নূর ওয়ালি মেসুদ নিজে চিঠি লিখে কর্মীদের ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ‘শান্ত’ থাকতে বলেছেন। পাকিস্তান সরকার তাঁকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য একসময় পুরস্কারও ঘোষণা করে। ড্রোন হামলায় টিটিপির নেতা মোল্লা ফজলুল্লাহকে হারানোর পর অকুতোভয় এই সংগঠন নূর ওয়ালি মেসুদকে কমান্ডার ঘোষণা করে তাদের অস্তিত্ব জাহির করেছিল।

২০১৯ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘সন্ত্রাসী’ তালিকায় আছেন মেসুদ। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোকে খুনের সঙ্গে তাঁর জড়িত থাকা নিয়ে বহু লেখাজোখা হয়েছে। মেসুদের নিজের বইয়েও (ইনকিলাব-ই-মেসুদ) এ বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত রয়েছে।

নূর ওয়ালি মেসুদ বেশ জনপ্রিয় একজন লেখক। ইমরান খানের সঙ্গে এ মুহূর্তে তাঁর কী ‘লেখা’ চালাচালি হচ্ছে তা নিয়ে জল্পনাকল্পনার শেষ নেই। এই দর–কষাকষির গোপনীয়তায় দেশটির সর্বোচ্চ আদালতও ক্ষুব্ধ। বিরোধী দলগুলো চাপ দিচ্ছে টিটিপির কাছে সরকারের ‘অঙ্গীকার’ পার্লামেন্টে তোলার জন্য। কেউ কেউ এ রকম ‘চুক্তি’কে গণভোটে দেওয়ার দাবি তুলেছে। আপাতত সেসব সম্ভাবনা নেই। ইমরান একাই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। এটাই দক্ষিণ এশিয়ার শাসনরীতি।

‘জাতীয় স্বার্থে’ অনুমোদন পেল ভারতীয় ‘আশীর্বাদপুষ্ট’রা!
আফগান-তালেবানের আদর্শকে বিবেচনায় নিলে টিটিপিকে তাদের সহযোদ্ধাই ভাবতে হয়। এটা মূলত জোটধর্মী সংগঠন। এই জোটে আছে পাকিস্তানের উগ্রপন্থী অনেক শক্তি, যাদের কাজের ধরন সশস্ত্র। ১৪ বছর হলো তারা পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লড়ছে। ‘মেসুদ’ ট্রাইবের বিশেষ প্রভাব আছে এই জোটে। দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তান এই ট্রাইবের শক্তির জায়গা। নূর ওয়ালি মেসুদের আগেও টিটিপিতে এই ট্রাইবের দুজন কমান্ডার ছিলেন—বায়তুল্লাহ ও হাকিমউল্লাহ। তবে নিজেদের এলাকার বাইরে করাচিতেও টিটিপির জোর আছে।

অন্যদিকে, টিএলপি কাজ করছে ২০১৫ সাল থেকে শহুরে চৌহদ্দিতে—মূলত পাঞ্জাবে। অস্ত্রশস্ত্র তাদেরও আছে এবং সমাবেশ-মিছিল থেকে তারা পুলিশকে নজর করে সেসব অবলীলায় ব্যবহারও করে। তবে টিটিপির মতো সশস্ত্র নয় তারা। প্রতিষ্ঠাতা খাদিম হোসেন রিজভির মৃত্যুর পর এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন পুত্র সাদ রিজভি। সরকার একসময় সাদকে ‘সন্ত্রাসী’ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করলেও এ মাসে সেটা প্রত্যাহার করা হয়েছে।

টিটিপি ও টিএলপির সৃষ্টি ও বিকাশে পাকিস্তানের অনুসন্ধানী সাংবাদিকেরা সব সময় বিভিন্ন ‘এজেন্সি’র মদদের কথা বলেন। বেসামরিক হাতিয়ার হিসেবে তাদের কাজে লাগানো হয়েছে বিভিন্ন সময়। তবে টিটিপির মতো টিএলপিকেও ভারতের অর্থপুষ্ট প্রচার করত সরকার। এখন সরকারিভাবে ঘোষণা দিয়ে রাজনৈতিক কাজের স্বাধীনতা দেওয়া হলো কথিত ওই ‘বিদেশি এজেন্ট’দের। যথারীতি ‘জাতীয় স্বার্থে’ এই অনুমোদন এসেছে।

পাকিস্তানের রাজনীতির মধ্যস্থতায় আফগান!
টিটিপির সঙ্গে ইমরান সরকারের চলতি আলোচনা ও চুক্তির সবচেয়ে কৌতূহলের দিক—এতে মধ্যস্থতা করছে আফগানিস্তানের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। পাকিস্তান সরকার প্রকাশ্যে সেটা জানিয়েছে। আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকিও একই দাবি করেছেন। সমঝোতা আলোচনাও চলছে আফগানিস্তানে—সেখানকার খোস্ত প্রদেশে। নিজ দেশে পরিপূর্ণভাবে ক্ষমতায় আসার তিন মাসের মাথায় অপর দেশের রাজনীতিতে মুরব্বিসুলভ সালিশের সুযোগ পেয়ে গেছে আফগান-তালেবান। কাবুলের পক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিরাজুদ্দিন হাক্কানি এই মধ্যস্থতায় আছেন। বহুল আলোচিত হাক্কানি নেটওয়ার্কের কর্ণধার তিনি।

এই আলোচনার আগেই আফগান কারাগারগুলো থেকে আগের সরকারের হাতে আটক টিটিপির কর্মীরা প্রায় সবাই ছাড়া পেয়েছেন। তাঁদের মুক্তি পাকিস্তানে টিটিপির জন্য সাংগঠনিকভাবে ভালো খবর। এখন সরকারের অনুমোদনে পাকিস্তানে টিটিপি রাজনৈতিক বৈধতা পেলে তাদের কর্মীদের প্রকাশ্যে আফগানিস্তানে অবস্থান সহজ হবে। এতে আফগান সরকারের দীর্ঘ মেয়াদে লাভ আছে। পাকিস্তানের অভ্যন্তরে প্রভাবশালী একটা রাজনৈতিক শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে সেখানকার সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্রকে আরও বেশি প্রভাবিত করার জায়গায় থাকবে তারা। এটা পাকিস্তানে পাঞ্জাবিদের বিপরীতে পশতুনদের শক্তি সঞ্চয়ের একটা প্রক্রিয়াও হয়ে উঠতে পারে। যেহেতু উভয় দেশে তালেবান নেতৃত্ব রয়েছে পশতুনদের হাতে।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী মনে করছে ইসলামাবাদের ওপর আফগান-তালেবান বর্তমান নির্ভরতা ভবিষ্যতে একই ধাঁচে না–ও থাকতে পারে। সুতরাং আফগানদের দিয়ে পাকিস্তানের তালেবানের সশস্ত্র কর্মকাণ্ড থেকে টেনে নিয়ে আসার এটাই সঠিক মুহূর্ত।

সুপ্রিম কোর্ট অসন্তুষ্ট
পাকিস্তান সরকার এত দিন একটা হাস্যকর স্ববিরোধিতার মধ্যে ছিল। তারা আফগান-তালেবানকে সমর্থন করত; আন্তর্জাতিক পরিসরে মদদও দিয়েছে। কিন্তু নিজ দেশের তালেবানকে মনে করত ‘সমস্যা’। এখন সেই সমস্যার মধ্যেই তারা ‘সমাধান’ খুঁজছে। টিটিপির সঙ্গে চুক্তির মধ্য দিয়ে সমকালীন পাকিস্তানের স্ববিরোধী ওই অধ্যায় আপাতত শেষ হচ্ছে।
ট্রাইবাল ‘ফ্রন্টিয়ার’-এ পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী এত দিন টিটিপির বিরুদ্ধে যুদ্ধাবস্থায় ছিল। সেসব বাহিনীর কর্তারা বর্তমান আলোচনা ও দর–কষাকষিতে গভীরভাবে যুক্ত আছেন। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, এর মধ্য দিয়ে টিটিপি অপরাজেয় ভাবমূর্তি নিয়ে সামনে আসবে। আফগান-তালেবানের একই রকম ভাবমূর্তি চূড়ান্ত যুদ্ধ ছাড়াই ন্যাটোকে তাড়িয়ে কাবুলে ক্ষমতায় আসতে সাহায্য করেছে।

চলতি আলোচনা ও স্বীকৃতির পর পাকিস্তানের রাজনীতি ও প্রশাসনকে ক্রমে তালেবান আদর্শবাদীদের বাড়তি জায়গা ছেড়ে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে হবে। তবে বহু পরিবারের পক্ষে এ অবস্থা মানা সহজ নয়। বিশেষ করে আর্মি পাবলিক স্কুলের ওই ১৩২টি শিশুর পিতা-মাতার পক্ষে এ অবস্থা খুব বেদনাদায়ক হবে। ২০১৪ সালে টিটিপি পেশোয়ারে ওই শিক্ষার্থীদের একসঙ্গে খুন করে, যার কোনো বিচার-আচার হয়নি।

পাঞ্জাবে টিএলপি কর্মীদের হাতে নিহত পুলিশ সদস্যদের ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতকে পাকিস্তান থেকে বহিষ্কারের দাবিতে টিএলপির দফায় দফায় লংমার্চ থেকে ইসলামাবাদকে বাঁচাতে এ বছর অন্তত ১০ জন পুলিশ কর্মকর্তা নিহত এবং পাঁচ শতাধিক জওয়ান আহত হয়েছেন। তাঁদের শোকাহত সহকর্মীদেরও এখন টিএলপিকে বৈধ দল হিসেবে মেনে নিতে হবে।

নির্মমতায় টিটিপি এবং টিএলপি কেউ কারও চেয়ে কম নজির স্থাপন করেনি পাকিস্তানে। ২০১২ সালে টিটিপি ১৭ জন রাষ্ট্রীয় সৈনিক হত্যা করে তাঁদের মাথা দিয়ে ফুটবল খেলার ভিডিও ছেড়েছিল যোগাযোগমাধ্যমে। অনেক পাকিস্তানির জন্য সেই স্মৃতি এখনো গভীর ক্ষোভের কারণ হয়ে আছে।

হয়তো এ কারণেই টিটিপির সঙ্গে সরকারের বোঝাপড়ায় কয়েক দিন আগে অসন্তুষ্টি দেখা গেল সর্বোচ্চ আদালতে। সুপ্রিম কোর্ট প্রধানমন্ত্রী ইমরানকে ডেকে এ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন। দেশের সর্বোচ্চ বিচারপতি গুলজার আহমেদ প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন তোলেন টিটিপিকে ২০১৪-এর খুনোখুনির জন্য বিচারের আওতায় না এনে উল্টো নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হচ্ছে কেন? বেঞ্চের অপর বিচারপতি কাজী মোহাম্মদ আমিন আহমেদের প্রশ্ন ছিল আরও সরাসরি, ‘আমরা কি আবারও আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছি?’

বাস্তবে বিচারপতি আমিনের শঙ্কা অমূলক নয়। পাকিস্তানের প্রচারমাধ্যমে সরকারের সঙ্গে টিটিপির গোপন সমঝোতার ছিটেফোঁটা যতটুকু ছাপা হচ্ছে তাতে জানা গেল, ট্রাইবাল এলাকাগুলোতে এই দলের কর্তৃত্ব অনানুষ্ঠানিকভাবে মেনে নিতে পারে সরকার। টিটিপি ওই সব এলাকায় ইতিমধ্যে শরিয়াহ আইনের যে প্রচলন করেছে, তাতে সরকার আর বাধা হয়ে দাঁড়াবে না বলেই মনে হয়। পাশাপাশি সরকারের হাতে আটক টিটিপি কর্মীরা ছাড়া পাবেন। সেই প্রক্রিয়া শুরুও হয়েছে। স্বভাবত তাঁদের বিরুদ্ধে ধ্বংসাত্মক কাজের মামলাগুলো আর থাকছে না। সরকার টিটিপিকে একটা বৈধ রাজনৈতিক দল হিসেবেও মেনে নিতে পারে।

টিএলপি ও টিটিপির মতো সংগঠন পাকিস্তানে কেবল দু–একটি নয়, বহু আছে। সরকারের সঙ্গে দর–কষাকষিতে এদের অর্জন অন্যদের দারুণভাবে উজ্জীবিত করবে।

ইমরান ক্ষমতায় থাকতে চান যেকোনো মূল্যে
টিটিপি বহুদিন থেকে পাকিস্তানের প্রান্তিক ট্রাইবাল অঞ্চলে বিকল্প প্রশাসন চালায়। পাকিস্তান সরকার প্রকাশ্যে স্বীকার না করলেও বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহৎ সশস্ত্র বাহিনীর গোয়েন্দাদের এটা অজানা নয়। ইমরান খানও সেই সূত্রে বাস্তব পরিস্থিতি জেনে থাকবেন। আফগান সীমান্তসংলগ্ন পাহাড়ি এলাকায় টিটিপির দাপট কমাতে সেনাবাহিনী বহু অভিযান চালিয়েছে। সেসব অভিযানে গেরিলাদের শক্তিভিত কমানো গেছে বলে মনে হয় না। সেনাবাহিনী সেটা কমাতে চেয়েছে কি না, সে–ও দুর্বোধ্য প্রশ্ন হয়ে আছে। ইতিমধ্যে স্পষ্ট, টিটিপির শক্তিভিত কেবল পাহাড়ি অঞ্চলে আটকে নেই আর।

টিএলপির সমাবেশ ক্ষমতাও বিস্ময়করভাবে বাড়ছে। ইসলামাবাদ কিংবা লাহোরের মতো শহর তারা জনবল দিয়ে অচল করে দিতে সক্ষম। চাইলেই যেমন সেনাবাহিনী টিটিপিকে নির্মূল করতে পারেনি, তেমনি রেঞ্জার্সদের অভিযানে এখন আর টিএলপিকে রাস্তা থেকে তুলে দেওয়া যায় না। পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীসমূহ এ রকম ‘শক্তি’গুলোর বিরুদ্ধে সিদ্ধান্তসূচক অভিযানের অবস্থায় নেই আর। টিটিপি কিংবা টিএলপির দাবিদাওয়ার প্রতি রাষ্ট্রের প্রায় সব সংস্থার সহানুভূতি ও সমর্থন আছে এবং তা বাড়ছে।

এ অবস্থায় ইমরানের সামনে বিকল্প দুটো। তালেবান-সুনামি রুখে দাঁড়ানো কিংবা তাদের অগ্রগতির পরের অধ্যায় মেনে নেওয়া। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী দ্বিতীয় বিকল্প বাছাই করলেন।

সরকার যুক্তি দেখাচ্ছে, ন্যাটো যদি আফগান–তালেবানের সঙ্গে সমঝোতা করতে পারে, পাকিস্তান কেন নিজ দেশে সেটা পারবে না। এই বক্তব্যে যুক্তি আছে। কিন্তু পাকিস্তান সরকার নিজ দেশে নিজেকে ন্যাটোর মতো আগ্রাসী শক্তির তকমা দিচ্ছে কি না, তা–ও ভাবা দরকার। আফগান-তালেবান লড়ছিল মাতৃভূমিকে দখলদারমুক্ত করতে। টিটিপির লড়াইয়ের সঙ্গে তার কীভাবে তুলনা চলে, বোঝা মুশকিল।

টিটিপি ও টিএলপির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বার্তাটি পরিষ্কার। ইমরান ‘ক্ষমতা’য় থাকতে চান; সমাজের অভিমুখ পাল্টাতে আসেননি। তিনি দেশবাসীকে এ–ও দেখাতে চান, আফগান-তালেবানের সহায়তা দিয়ে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার উন্নতি করা যাচ্ছে। টিটিপির মতো দলকে প্রকাশ্যে মদদ দিয়ে ফ্রন্টিয়ারে পশতুন তাফফুজ মুভমেন্ট ও ন্যাপের মতো পরিবর্তনবাদী দলগুলোকে কোণঠাসা করাও পাকিস্তান রাষ্ট্রের লক্ষ্য হিসেবে থাকতে পারে। ইমরানের পিটিআইয়ের সঙ্গে টিএলপির নির্বাচনী সমঝোতার কথাও শোনা যাচ্ছে। ব্লাসফেমি আইনের প্রতি সমর্থন এই দুই শক্তিকে কাছাকাছি নিয়ে আসতে পারে।

বলা বাহুল্য, ইমরান সরকারের এ রকম সব কৌশলে দেশের রাজনীতির চেহারা পাল্টাবে। আফগানিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তানের সমাজের ফারাকও ক্রমে কমিয়ে আনবে এসব উদ্যোগ। প্রতিবেশী দেশে পাকিস্তানের দীর্ঘ হস্তক্ষেপের এক করুণ প্রতিশোধ হয়ে উঠতে পারে এ দৃশ্য। দেশকে নিয়ে ওই নিয়তির দিকেই হাঁটছেন আপাতত ক্যাপ্টেন খান।

 

আলতাফ পারভেজ দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাস বিষয়ে গবেষক

শেয়ার করুন: